![]() |
রোজিনা, ছবিঃ সংগৃহীত |
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের এই নারী জেলা শহর ও আশেপাশের এলাকায় চলাচলকারী প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকদের মধ্যে একমাত্র নারী চালক।
টাঙ্গাইল শহরের একপ্রান্ত নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে আরেক প্রান্ত বেবিস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিদিন ভাড়া করা অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায় এই ত্রিশোর্ধ নারীকে।
শহরে যানজটের পাশাপাশি নানা ঝামেলা সামলাতে পুরুষ চালকরা যখন অটোরিকশা চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন, তখন গত সাড়ে ৪ বছর ধরে চলছে রোজিনার এই কাজ।
‘শহরের পুরুষ অটোরিকশা চালকরা আমাকে সম্মান করে। আমি যখন রাস্তার ওপর অটো ঘুরাই তারা নিজেদের অটো দাঁড় করে রেখে আমাকে সুযোগ দেন। বড় গাড়ির চালকরাও যখন দেখেন আমি নারী তখন তারাও আমার প্রতি সম্মান দেখান।'---রোজিনা
আমি রোজিনাকে স্যালুট জানাই। একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারী কোনো দিক থেকেই কম নন, রোজিনা তা প্রমাণ করেছেন।
জানা যায় ৩ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে রোজিনাকে বাবা-মাহীন এক অনাথ যুবকের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন তার গরিব তাঁত শ্রমিক বাবা। বিয়ের পর জন্ম হয় ২ কন্যা সন্তানের। অটোরিকশা চালিয়ে কোনক্রমে সংসার চালাচ্ছিলেন স্বামী রফিকুল। কিন্তু, ছেলেবেলায় দুর্ঘটনায় রফিকুলের এক চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট অপরটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত চোখের দৃষ্টি শক্তি আরও ক্ষীণ হয়ে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল অটোরিকশা চালানো।
সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষটি অচল হয়ে পড়ায় স্বামীর চিকিৎসার খরচ, ঘরভাড়া, খাওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বন্ধ হয়ে যায়। দিশেহারা রোজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে এবং এনজিও থেকে ধার করে কোনক্রমে সংসার চালাতে পারলেও মেয়েদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ জোগাড় করতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে রোজিনা নিজে অটোরিকশা চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং স্বামী রফিকুলের কাছে তা শিখতে চান।
গ্রামের স্কুলের মাঠে স্বামীর কাছে অটোরিকশা চালানো শেখেন রোজিনা। পরে গ্রামের পথে ৩-৪ দিন অনুশীলন করে অটোরিকশা নিয়ে একদিন সরাসরি টাঙ্গাইল শহরে চলে আসে রোজিনা। এভাবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যান তিনি।
'সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার জন্য খুব সহজ ছিল না। ৭ আর ২ বছর বয়সী মেয়েকে ভাড়া বাসায় রেখে অটোরিকশা নিয়ে সারাদিন রাস্তায় থাকতে হয়।'---রোজিনা
0 Comments