Ad Code

Latest

6/recent/ticker-posts

পৃথিবী বাঁচাতে আমরা কতটুকু সচেতন

 পৃথিবী বাঁচাতে আমরা কতটুকু সচেতন

পরিবেশ

                                                                        Conscious to save the world
প্রকৃতির পরিবেশ পরিবর্তন মানুষর জাতি উদ্বিগ্নতা বেড়ে চলছ। সময়ের পরিবর্তনে জলবায়ু সম্মেলের জায়গা পরিবর্তন হয় গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন নাটকীয়ভাবে শেষ হয়েছে। কী বার্তা পেল মানবজাতি ? পৃথিবীকে বাঁচাতে বিশ্বনেতাদের কতটুকু ভূমিকা আছে। মানবজাতির বসবাসের একমাত্র আশ্রয়স্থল পৃথিবী নামক গ্রহে। বিজ্ঞানীদের নানা রকম তত্ত্ব ও আবিষ্কারের ফসল হিসাবে মানবজাতি স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারছে। পুরো বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিনত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে চলছে। পৃথিবীতে জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত যত বাড়ছে কৃত্রিম সংকট ততই বেড়েই চলছে। সূর্যকে কেন্দ্র করে অবিরামভাবে গ্রহগুলো যেমন ঘুরছে মানবজাতির সমস্যা গুলো চারদেয়ালে ততই বন্দি হয়ে আছে। ফলে পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে। 
কারা পৃথিবীকে অযোগ্য করে গড়ে তুলতেছে? পুরো পৃথিবীকে যদি দুই অংশে বিভক্ত করি তাহলে প্রথম অংশ শাসক শ্রেণি অর্থাৎ যারা দেশে দেশে শাসন করে থাকে আরেক অংশ শোষিত শ্রেণি। যারা কি না নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারায় শোষিত হয়। বিশ্বে ধনী দেশ গুলো কার্বন নিঃসরণ করে পুঁজির পাহাড় গড়ে তুলছে। অন্যদিকে গরিব দেশগুলোতে জলবায়ু বিরূপ প্রভাব পড়ে ধুকছে। তাহলে কারা পৃথিবী ধ্বংসের জন্য দায়ি হবে তা ইতোমধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কারা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী? পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের মোড়ল বলে থাকি যুক্তরাষ্ট্রকে। সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বনেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। ক্ষমা চাইলে তো দায়িত্ব শেষ হয়? না কি ট্রাম্পের দেখানো পথে তিনি হাটবেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
ইতোমধ্যে যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দাবানল, অসময়ে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এমনকি বায়ুদূষণ। সম্প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বায়ুদূষণ ঠেকাতে পুরো এলাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তত ছয়টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে পূর্বপরিকল্পনা যদি নেওয়া হত তাহলে আজকে মানুষকে ওই ভোগান্তির শিকার হতো না। অথচ ভারত সরকার জলবায়ু সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছে, ২০৭০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ ‘নিট জিরো’তে নামিয়ে আনবে তারা। তাদের ওই ঘোষণা দেখে মনে হচ্ছে তা কখনও বাস্তবায়ন হবে না কারণ ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক জলবায়ু তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। পুঁজিবাদের চরিত্র মুনফা অর্জন। তাতে যদি প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করতে তবুও পিছুপা হবে না। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ বায়ুদূষণ। 
মানুষের গড় আয়ু প্রায় তিন বছর কমে যাচ্ছে শুধু বায়ুদূষণের কারণে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কেবল বায়ুদূষণের কারণে, যার মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬ সম্মেলনে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ থেকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, গবেষক, পরিবেশকর্মী, সাংবাদিকসহ ২৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা শেষে গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট হয়েছে। পৃথিবীকে বাঁচাতে কি কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বিশ্লেষণ দেখা যায়, এ সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বন নিধন বন্ধের চুক্তি, মিথেন গ্যাসের বৈশ্বিক উৎপাদন হ্রাসের অঙ্গীকার, ক্রমান্বয়ে কয়লার ব্যবহার হ্রাস এবং ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি)। ওই সিদ্ধান্ত গুলো বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববাসী পৃথিবীতে বসবাসের যোগ্য বলে আশার আলো দেখবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গুলো যদি কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ থাকে তাহলে পৃথিবীকে ভবিষ্যৎতে মহাবিপদের মধ্যে ঠেলে বিশ্বনেতারা। ওই সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে বন ধ্বংস বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। 
ওই প্রতিশ্রুতি আদৌও কি কার্যকর হবে তা নিয়ে আমাদের দেশে পরিবেশবাদী মানুষ উদ্বিগ্ন। কারণ ইতোমধ্যে আমাদের সরকার প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের জন্য সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে পরিবেশ বিজ্ঞানী সহ আমাদের দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তি মতামত দিয়েছিলেন। সেই মতামত উপেক্ষা করে রামপালে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করছে সরকার। বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় যত দিন যাচ্ছে নদীগুলো খালেই পরিনত হচ্ছে। নদী রক্ষার আন্দোলন থেমে নেই কিন্তু নদী বাঁচানোর দায়িত্ব কার? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশের দেশীয় মাছ গুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী বিলীন হচ্ছে, মাছ বিলীন হচ্ছে ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের দারপ্রান্তে তাহলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে মানুষ বিলীন হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে। রাষ্ট্রকে এর যথাযথ উত্তর দিতে হবে। আমরা মানবজাতি খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে পৃথিবীতে বেঁচে থাকি কিন্তু এভাবে যদি একটা পর খাদ্যশৃঙ্খলের সদস্য ধ্বংস হয় তাহলে ভবিষ্যৎ দেশ হবে বসবাসের অযোগ্য। 
আমাদের রাজধানী ইতোমধ্যে বায়ুদূষণের কবলে পড়ে ঢাকা শহরকে অযোগ্য নগরীতে পরিনত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অর্থ তহবিল বরাদ্দ এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্মেলনে তুলে ধরেন।জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। কপ২৬ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী পেল, তার চেয়ে বড় বিষয় বাংলাদেশ কী কী অঙ্গীকার করেছে। বন উজাড় বন্ধ করা এবং জলবায়ু সহনশীলতার মধ্য দিয়ে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার চুক্তিসহ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। যা যা অঙ্গীকার তার ফলাফল আমরা দেশবাসী দেখতে চাই। এসব চুক্তির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য অর্থায়ন প্রাপ্তিতেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। 

কপ২৬ সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন ও ভারতকে কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে। ৪০টিরও বেশি দেশ কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে চুক্তি সই করেছে।

এবারের সম্মেলন ঘিরে শেষ মুহূর্তে চুক্তি হলেও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কতগুলো ইস্যু অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে ধনী দেশগুলো অঙ্গীকার করলে কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেল। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের বসবাস চীনে। ১৮৫০ সাল থেকে গোটা বিশ্বে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তার প্রায় ১৪ শতাংশের জন্য দায়ী দেশটি। এখন পর্যন্ত চীন বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশ। চলতি বছর মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হয়েছে, তার ৩১ শতাংশের জন্য চীন দায়ী। গ্লাসগো সম্মেলনে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল গঠনের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে চীন। তবে এ তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত দেশটিকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। কবে দেওয়া হবে তা কোনো নিশ্চয়তা নেই। পৃথিবীর ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পৃথিবীকে একযোগে কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে ধরিত্রী রক্ষায় বিশ্বনেতারা একমত হয়েছেন। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতেও তারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তা যথাযথ ভাবে কার্যকর করতে হবে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। মানবজাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বনেতাদের তা মেনে নিয়ে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি উদ্ধার, দাবানল মোকাবিলা ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে সহায়তায় দিতে হবে। কেবল মানবজাতির সচেতনতাই পারে ধরিত্রীকে বাঁচাতে। তাই নিজেদের অবস্থান থেকেও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।


লেখকঃ রাশেদুজ্জামান রাশেদ
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

Post a Comment

0 Comments