ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের কার্যক্রম চালু
![]() |
ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের কার্যক্রম চালু , ছবিঃ ২৯ জুলাই ২০২২ |
গরিব, দুঃখি ও অসহায় মানুষের পরীক্ষিত বন্ধু উত্তরবঙ্গের বিপ্লবী বামপন্থি নেতা হিসাবে তার জীবন সংগ্রামের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি মৃত্যুর পূর্বেই গ্রামীণ জনপদের মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নিজ উদ্যেগে পাঠাগার চালু করেন।
Knowledge brings progress, progress is liberation:
“জ্ঞান আনে প্রগতি, প্রগতিই মুক্তি”-স্লোগানকে সামনে রেখে নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলার ডাঙ্গারহাটে ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের কার্যক্রম চালু করা হয়। উল্লেখ্য ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের নামকরণ করা হয় উত্তরবঙ্গের ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন সরকার ভাসানীর নাম অনুসারে । গরিব, দুঃখি ও অসহায় মানুষের পরীক্ষিত বন্ধু উত্তরবঙ্গের বিপ্লবী বামপন্থি নেতা হিসাবে তার জীবন সংগ্রামের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি মৃত্যুর পূর্বেই গ্রামীণ জনপদের মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নিজ উদ্যেগে পাঠাগার চালু করেন। তার মৃত্যুর পর নানা জটিলতায় পাঠাগারটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে তার নাতি ( তার মেয়ের ছেলে) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কৃষিবিদ এম এল রুমির নেতৃত্বে গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে ডাঙ্গারহাটে ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের কার্যক্রম চালু করেন।
শুক্রবার বিকাল ৪ টায় ডাঙ্গারহাট বালাপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে ভাসানী সংসদ শহীদ স্মৃতি পাঠাগার কার্যক্রম চালু উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন কর হয়।
কৃষিবিদ এম এল রুমির সভাপত্বিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ, শিক্ষক বিজয় মুন্সী, নীলফামারী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান আতিক, বাসদ মাক্সবাদী নেতা বুলবুল ইসলাম, বালাপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এস এসসি পরীক্ষার্থী মেহেদী হাচান মাসুদ প্রমূখ।
উল্লেখ্য মনীর উদ্দীন ভাসানী ১২ জুন ১৯৩০ সালে নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ভাসানী পাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মনির উদ্দীন ভাসানীর বাবার নাম আয়েজদ্দীন সরকার ও মায়ের নাম গুলধন বিবি। তিনি পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান। তিনি গোমনাতী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। তখন ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ, যা পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নামে গঠিত হয়। তখন থেকে ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির একজন তরুণ কর্মী ছিলেন। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এর আহবায়ক ছিলেন আবদুল মতিন। পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। এ সময় সরকার আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব পেশ করে। এর বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি ( একুশে ফেব্রুয়ারি) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে স্লোগানে রাজপথে ছিলেন মনির উদ্দীন ভাসানী। তিনি তৎকালিন ডিমলা থানার ভাসানী ন্যাপের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন । তিনি সে সময়ের ন্যাপের সমর্থক তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে পৌঁছাতেন। সেই সাথে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত বধ্যভূমি ২নং বালাপাড়া ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মনির উদ্দীন ভাসানী কাঠের নির্মিত মিনারে প্রথম স্তম্ভ নির্মাণ করে শহীদদের সম্মান জানানোর প্রচলন শুরু করেছিলেন।
![]() |
ছবিঃ ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন সরকার ভাসানী |
0 Comments